প্রান্তরের পারে তব তিমিরের খেয়া
নীরবে যেতেছে দুলে নিদালি আলেয়া!
-হেথা, গৃহবাতায়নে নিভে গেছে প্রদীপের শিখা,
ঘোমটায় আঁখি ঘেরি রাত্রি-কুমারিকা
চুপে চুপে চলিতেছে বনপথ ধরি!
আকাশের বুকে বুকে কাহাদের মেঘের গাগরী
ডুবে যায় ধীরে ধীরে আঁধার সাগরে!
ঢুলু-ঢুলু তারকার নয়নের পরে
নিশি নেমে আসে গাঢ়-স্বপনঙ্কুল!
শেহালায় ঢাকা শ্যাম বালুকার কূল
বনমালীর সাথে ঘুমায়েছে কবে!
বেণুবনশাখে কোন্ পেচকের রবে
চমকিছে নিরালা যামিনী!
পাতাল-নিলয় ছাড়ি কে নাগকামিনী
আঁকাবাঁকা গিরিপথে চলিয়াছে চিত্রা অভিসারিকার প্রায়!
শ্মশানশয্যায়
নেভ-নেভ কোন্ চিতা-স্ফুলিঙ্গেরে ঘিরে
ক্ষুধিত আঁধার আসি জমিতেছে ধীরে!
নিদ্রার দেউলমূলে চোখ দুটি মুদে
স্বপ্নের বুদ্বুদে
বিলসিছে যবে ক্লান্ত ঘুমন্তের দল-
হে অনল-উন্মুখ, চঞ্চল
উন্নমিত আঁখিদুটি মেলি
সন্তরি চলিছ তুমি রাত্রির কুহেলি
কোন্ দূর কামনার পানে!
ঝলমল দিবা অবসান
বধির আঁধারে
কান্তারের দ্বারে
একি তব মৌন নিবেদন!
-দিগভ্রান্ত-দরদী-উন্মন!
পল্লীপসারিণী যবে পণ্যরত্ন হেঁকে গেছে চ’লে
তোমার পিঙ্গল আঁখি ওঠে নি তো জ্বলে
আকাঙ্কার উলঙ্গ উল্লাসে!
জনতায়-নগরীর তোরণের পাশে,
অন্তঃপুরিকার বুকে, মণিসৌধসোপানের তীরে,
মরকত-ইন্দ্রনীল-অয়স্কান- খনির তিমিরে
যাও নি তো কভু তুমি পাথেয় সন্ধানে!
ভাঙা হাটে-ভিজা মাঠে-মরণের পানে
শীত প্রেতপুরে
একা একা মরিতেছ ঘুরে
না জানি কী পিপাসার ক্ষোভে!
আমাদের ব্যর্থতায়, আমাদের সকাতর কামনায় লোভে
মাগিতে আস নি তুমি নিমেষের ঠাঁই!
-অন্ধকার জলাভুমি কঙ্কালের ছাই,
পল্লীকান্তারের ছায়া-তেপান্তর পথের বিস্ময়
নিশীথের দীর্ঘশ্বাসময়
করিয়াছে বিমনা তোমারে!
রাত্রি-পারাবারে
ফিরিতেছ বারম্বার একাকী বিচরি!
হেমন্তের হিম পথ ধরি,
পউষ, আকাশতলে দহি দহি দহি
ছুটিতেছ বিহ্বল বিরহী
কত শত যুগজন্ম বহি!
কারে কবে বেসেছিলে ভালো
হে ফকির, আলেয়ার আলো!
কোন্ দূরে অস-মিত যৌবনের স্মৃতি বিমথিয়া
চিত্তে তব জাগিতেছে কবেকার প্রিয়া!
সে কোন্ রাত্রির হিমে হয়ে গেছে হারা!
নিয়েছে ভুলায়ে তারে মায়াবী ও নিশিমরু,
আঁধার সাহারা!
আজও তব লোহিত কপোলে
চুম্বন-শোণিমা তার উঠিতেছে জ্ব’লে
অনল-ব্যথায়!
চ’লে যায়-মিলনের লগ্ন চ’লে যায়!
দিকে দিকে ধূমাবাহু যায় তব ছুটি
অন্ধকারে লুটি লুটি লুটি!
ছলাময় আকাশের নিচে
লক্ষ প্রেতবধূদের পিছে
ছুটিয়া চলিছে তব প্রেম-পিপাসার
অগ্নি অভিসার!
বহ্নি-ফেনা নিঙাড়িয়া পাত্র ভরি ভরি,
অনন্ত অঙ্গার দিয়া হৃদয়ের পান্ডুলিপি গড়ি,
উষার বাতাস ভুলি, পলাতকা রাত্রির পিছনে
যুগ যুগ ছুটিতেছ কার অন্বেষণে।
লিখেছেন
জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:
* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:
* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:
* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:
* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।