সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

সূর্যকরোজ্জ্বলা

1
0

আমরা কিছু চেয়েছিলাম প্রিয়;
নক্ষত্র মেঘ আশা আলোর ঘরে
ঐ পৃথিবীর সূর্যসাগরে দেখেছিলাম ফেনশীর্ষ আলোড়নের পথে
মানুষ তাহার ছায়ান্ধকার নিজের জগতে
জন্ম নিল- এগিয়ে গেল; – কত আগুন কত তুষার যুগ
শেষ করে সে আলোর লক্ষ্যে চলার কোন্‌ শেষ
হবে না আর জেনে নিয়ে নির্মল নির্দেশ
পেয়ে যাবে গভীর জ্ঞানের, – ভেবেছিলাম,
পেয়ে যাবে প্রেমের স্পষ্ট গতি
সত্য সূর্যালোকের মতন; – ব’লে গেল মৃত
অন্ধকারে জীবিতদের প্রতি।

জীবিত, মানে আজ সময়ের পথে
বালি শিশির ধুলোর মতো কণা
মিলিয়ে তাদের প্রাণের প্রেরণা
ক্রমেই চরিতার্থ হতে চায়।
চারদিকে নীল অপার্থিবতায়
সোনার মতন চিলের ডানায় কোনো
খাদ মেশানো নেই, তবু তার প্রাণে
কোটি বছর পরে কোনো মানে
বার করেছে মন কি প্রকৃতির?
মানুষ তবু পাখির চেয়ে ঢের
অমৃতলোক হাতের কাছে পেয়ে
তবু কি অমৃতের?

মানুষ আমি,- মানুষ আমার পাশে
হৃদয়ে তার হৃদয় মেশালেও
ব্যক্তি আমি ব্যক্তিপুরুষ সে-ও;
দ্বীপের মতন একা আমি তুমি;
অনন্ত সব পৃথক দ্বীপের একক মরুভূমি:
যে যার পরিপূর্ণ অবিশ্বাসে
র’য়ে গেছে;- সেখান থেকে ব্যাজস্তূতি কপট প্রণয় ভয়
দেখ কেমন উৎসারিত হয়;
প্রাণের প্রয়াস রয়েছে তবু, তাই
দেখেছি মানুষ অনর্গল অন্ধকারে মরে
মানবকে তার প্রতিনিধি রেখে গেছে, – হয়তো একদিন
সফলতা পেয়ে যাবে ইতিহাসের ভোরে।

চারদিকেতে সব মানুষের ব্যথা মধুরতা
নির্মলতার সাগর সূর্যে ঝরে।
বন্ধু আমার ভোরে এলে দেয়ালে ছায়া পড়ে
তবুও কি ম্যামথ পৃথিবীর?
সে কোন্‌ যুগের সরীসৃপের অব্যক্ত শরীর
কামনা ভুল কুজঝটিকায় সে সব অসঙ্গতি
এনেছিল – তাদের তুমি সহিষ্ণুতায় শুদ্ধ করে নিয়ে
ইতিহাসের অন্ধকারে প্রথম শিশু মানুষ জাগিয়ে
চলছে আজো একটি সূর্য হঠাৎ হারিয়ে ফেলার ভয়ে;
হয়তো মানুষ নিজেই স্বাধীন, অথবা তার দায়ভাগিনী তুমি;
ওরা আসে, লীন হয়ে যায়; হে মহাপৃথিবী,
সূর্যকরোজ্জ্বল মানুষের প্রেম চেতনার ভূমি।।

জীবনানন্দ দাশ
WRITTEN BY

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:

* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:

* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।

মন্তব্য করুন