বুকে তব সুরপরী বিরহবিধুর
গেয়ে যায়, হে জলধি, মায়ার মুকুর!
কোন্ দূর আকাশের ময়ুর-নীলিমা
তোমারে উতলা করে! বালুচরসীমা
উলঙ্ঘি তুলিছ তাই শিরোপা তোমার,-
উচ্ছৃঙ্খল অট্টহাসি-তরঙ্গের বাঁকা তলোয়ার!
গলে মৃগতৃষ্ণাবিষ, মারীর আগল
তোমার সুরার স্পর্শে আশেক-পাগল!
উদ্যত উর্মির বুকে অরূপের ছবি
নিত্যকাল বহিছ হে মরমিয়া কবি
হে দুন্দুভি দুর্জয়ের, দুরন্ত, আগধ।
পেয়েছি শক্তির তৃপ্তি, বিজয়ের স্বাদ
তোমার উলঙ্গনীল তরঙ্গের গানে!
কালে কালে দেশে দেশে মানুষসন্তানে
তুমি শিখায়েছ বন্দু দুর্মদ-দুরাশা!
আমাদের বুকে তুমি জাগালে পিপাসা
দুশ্চর তটের লাগি-সুদূরের তরে।
রহস্যের মায়াসৌধ বক্ষের উপরে
ধরেছ দুস্তরকাল; তুচ্ছ অভিলাষ,
দুদিনের আশা, শানি-, আকাঙক্ষা, উল্লাস
পলকের দৈন্য-জ্বালা-জয়-পরাজয়,
ত্রাস্তব্যথা-হাসি-অশ্রু-তপস্যা সঞ্চয়-
পিনাক শিখায় তব হল ছারখার
ইচ্ছার বাড়বকুন্ডে, উগ্র পিপাসার
ধু ধু ধু ধু বেদীতটে আপনারে দিতেছ আহুতি।
মোর ক্ষুধা-দেবতারে তুমি কর স্তুতি!
নিত্য নব বাসনার হলাহলে রাঙি
‘পারীয়া’র প্রাণ লয়ে আছি মোরা জাগি
বসুধার বাঞ্ছাকূপে, উঞ্ছের অঙ্গনে!
নিমেষের খেদ-হর্ষ-বিষাদের সনে
বীভৎস খঞ্জের মতো করি মাতামাতি!
চুরমার হয়ে যায় বেলোয়ারি বাতি!
ক্ষুরধার আকাঙ্খার অগ্নি দিয়া চিতা
গড়ি তবু বারবার-বারবার ধুতুরার তিতা
নিঃস্ব নীল ওষ্ঠ তুলি নিতেছি চুমিয়া।
মোর বক্ষকপোতের কপোতিনী প্রিয়া
কোথা কবে উড়ে গেছে-পড়ে আছে আহা
নষ্ট নীড়, ঝরা পাতা, পুবালিকা হা হা!
কাঁদে বুকে মরা নদী, শীতের কুয়াশা!
ওহে সিন্ধু,্ আসিয়াছি আমি সর্বনাশা
ভুখারি ভিখারি একা, আসন্ন-বিকাশ!
-চাহি না পলার মালা, শুক্তির কলস,
মুক্তাতোরণের তট মীনকুমারীর
চাহি না নিতল নীড় বারুণীরানির।
মোর ক্ষুধা উগ্র আরো, অলঙ্ঘ্য অপার!
একদিন কুকুরের মতো হাহাকার
তুলেছিনু ফোঁটা ফোঁটা রুধিরের লাগি!
একদিন মুখখানা উঠেছিল রাঙি
ক্লেদবসাপিন্ড চুমি সিক্ত বাসনার!
মোরে ঘিরে কেঁদেছিল কুহেলি আঁধার,-
শ্মশানফেরুর পাল, শিশিরর নিশা,
আলেয়ার ভিজা মাঠে ভুলেছিনু দিশা!
আমার হৃদয়পীঠে মোর ভগবান
বেদনার পিরামিড পাহারপ্রমাণ
গেঁথে গেছে গরলের পাত্র চুমুকিয়া;
রুদ্র তরবার তব উঠুক নাচিয়া
উচ্ছিষ্টের কলেজায়, অশিব-স্বপনে,
হে জলধি, শব্দভেদী উগ্র আস্ফালনে!
পূজাথালা হাতে ল’য়ে আসিয়াছে কত পান’; কত পথবালা
সহর্ষে সমুদ্রতীরে; বুকে যার বিষমাখা শায়কের জ্বালা
সে শুধু এসেছে বন্ধু চুপে চুপে একা
অন্ধকারে একবার দুজনার দেখা!
বৈশাখের বেলাতটে সমুদ্রের স্বর-
অনন্ত, অভঙ্গ, উষ্ণ, আনন্দসুন্দর!
তারপর, দূর পথে অভিযান বাহি
চলে যাব জীবনের জয়গান গাহি।
লিখেছেন
জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:
* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:
* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:
* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:
* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।