স্বপ্ন দেশ

67
0

আজ ফাল্গুনী চাঁদের জ্যোছনা জুয়ারে ভুবন ভাসিয়া যায়
ওরে স্বপন দেশের পরী বিহঙ্গী পাখা মেলে উড়ে যায়।
এই শ্যামল কোমল ঘাসে এই বিকচ পুন্দরাসে
এই বন-মল্লিকা বাসে এই ফুরফুরে মলয়ায়।
দেখ ঘাসের ডাঁটায় ফড়িং ঘুমায় সবুজ স্বপন সুখে
দেখ পদ্মকোরকে অচেতন অলি শেষ মধুকণা মুখে
হেথা ঝিঁঝির ঝি ঝিট তান দেখ নিশি শেষে অবসান
ছোট টুনটুনিদের গান এবে বিরত ক্লান্ত বুকে
দেখ্ মোহ মুর্ছিত মধুর ধরণী সব ধ্বনি গেছে চুকে ।
তোরে শিরীষ ফুলের পাপগি খসায়ে পরাগ করিব দান
তোরে রজনীগন্ধা গেলাস ভরিয়া অমিয়া করাব পান
শেষে ঘুম যদি তোর পায়,, গাহি মৃদু গুঞ্ন গান
চারু ঊর্ণনাভের ঝিকিমিকি জালে কেশরের উপাধান।
শেষে জোনাকির আলো নিভাবে যখন ঊষার কুয়শাসারে
মোরা স্বপন শয়ন ভাঙ্গি দিব তোর পাপিয়ার ঝংকারে।
যদি ফিরে যেতে মন চায় যাস ঝিরি ঝিরি ঊষা বায়
চড়ি প্রজাপতির পাখায় হিম সিক্ত শিশিরধারে
সাথে নিয়ে যাস এই রজনীর স্মৃতি ধরণীর পরপারে।।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী
লিখেছেন

যতীন্দ্রমোহন বাগচী

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন একজন বাঙালি কবি, সম্পাদক, এবং সরকারি কর্মচারী। তিনি ১৮৭৮ সালের ২৭শে নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার জমশেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার বলাগড় গ্রামে।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী কলকাতার ডাফ কলেজ (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে বিএ পাস করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের সচিব, নাটোরের মহারাজার সচিব, কলকাতা কর্পোরেশনের লাইসেন্স-ইন্সপেক্টর, এফ.এন গুপ্ত কোম্পানির ম্যানেজার প্রভৃতি পদে চাকরি করেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ১৯০৯ থেকে নিয়ে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সাহিত্য পত্রিকা মানসী-র সম্পাদনায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২১ থেকে নিয়ে বছরখানেক তিনি অপর এক সাহিত্য সাময়িকী যমুনা-র যুগ্ম সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৭-৪৮ সালে তিনি নজস্ব পত্রিকা পূর্বাচল চালু করেন এবং এর সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী একজন রোমান্টিক কবি ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, এবং মানবতাবাদের বিষয়গুলি প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতার ভাষা সুন্দর, ছন্দময়, এবং মর্মস্পর্শী।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে "উষা", "সাধনা", "কল্যাণী", "আশা", "ভালোবাসা", এবং "বিজয়ী"। তার রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে "বিচারপতি সারদাচরণ মিত্র", "নাটোরের মহারাজা", "কলকাতা কর্পোরেশনের ইতিহাস", এবং "পূর্বভারতের ইতিহাস"।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী তার সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের "জগত্তারিণী স্বর্ণপদক", এবং ১৯৩৭ সালে "রবীন্দ্র পুরস্কার" লাভ করেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

* প্রকৃতিপ্রেম: যতীন্দ্রমোহন বাগচী একজন প্রকৃতিপ্রেমী কবি ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের বর্ণনা অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক।
* প্রেম: যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতায় প্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কবিতায় প্রেমের নানা রূপ ও বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে।
* মানবতাবাদ: যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন একজন মানবতাবাদী কবি। তার কবিতায় মানবতার মহিমা ও মর্যাদার বর্ণনা রয়েছে।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতায় তিনি বাংলার গ্রামীণ জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেমের ভাবধারা প্রকাশ করেছেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতার ভাষা সুন্দর, ছন্দময়, এবং মর্মস্পর্শী। তার কবিতায় তিনি বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন।

মন্তব্য করুন