অপরাজিতা

223
0

পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে,
তবু কেন তোর অ-পরাজিতা নাম
গন্ধ কি তোর বিন্দুমাত্র আছে ?
বর্ণ, সেও তো নয় নয়নাভিরাম !

ক্ষুদ্র শেফালি তারো মধু-সৌরভ,
ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি;
গরবিনি, তোর কিসে তবে গৌরব –
রূপ গুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি !

কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে –
ফুল কহে, মোর কিছু নাই – কিছু নাই;
তোমরা যে নামে ডাকিয়াছ দয়া ক’রে,
আমি শুধু ভাই, তাই – আমি শুধু তাই !

ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাইনা’ক,
পুষ্পমালায় নাহিক আমার স্থান;
প্রিয়-উপহারে ভুলেও কি মোরে ডাক ?
বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ।

মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে,
পূজা, শুধু পূজা জীবনের মোর ব্রত;
তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে –
অন্তরযামী, তিনিও তোমারি মতো !

যতীন্দ্রমোহন বাগচী
লিখেছেন

যতীন্দ্রমোহন বাগচী

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন একজন বাঙালি কবি, সম্পাদক, এবং সরকারি কর্মচারী। তিনি ১৮৭৮ সালের ২৭শে নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার জমশেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার বলাগড় গ্রামে।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী কলকাতার ডাফ কলেজ (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে বিএ পাস করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের সচিব, নাটোরের মহারাজার সচিব, কলকাতা কর্পোরেশনের লাইসেন্স-ইন্সপেক্টর, এফ.এন গুপ্ত কোম্পানির ম্যানেজার প্রভৃতি পদে চাকরি করেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ১৯০৯ থেকে নিয়ে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সাহিত্য পত্রিকা মানসী-র সম্পাদনায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২১ থেকে নিয়ে বছরখানেক তিনি অপর এক সাহিত্য সাময়িকী যমুনা-র যুগ্ম সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৭-৪৮ সালে তিনি নজস্ব পত্রিকা পূর্বাচল চালু করেন এবং এর সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী একজন রোমান্টিক কবি ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, এবং মানবতাবাদের বিষয়গুলি প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতার ভাষা সুন্দর, ছন্দময়, এবং মর্মস্পর্শী।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে "উষা", "সাধনা", "কল্যাণী", "আশা", "ভালোবাসা", এবং "বিজয়ী"। তার রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে "বিচারপতি সারদাচরণ মিত্র", "নাটোরের মহারাজা", "কলকাতা কর্পোরেশনের ইতিহাস", এবং "পূর্বভারতের ইতিহাস"।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী তার সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯২৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের "জগত্তারিণী স্বর্ণপদক", এবং ১৯৩৭ সালে "রবীন্দ্র পুরস্কার" লাভ করেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

* প্রকৃতিপ্রেম: যতীন্দ্রমোহন বাগচী একজন প্রকৃতিপ্রেমী কবি ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের বর্ণনা অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক।
* প্রেম: যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতায় প্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কবিতায় প্রেমের নানা রূপ ও বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে।
* মানবতাবাদ: যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন একজন মানবতাবাদী কবি। তার কবিতায় মানবতার মহিমা ও মর্যাদার বর্ণনা রয়েছে।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতায় তিনি বাংলার গ্রামীণ জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেমের ভাবধারা প্রকাশ করেছেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিতার ভাষা সুন্দর, ছন্দময়, এবং মর্মস্পর্শী। তার কবিতায় তিনি বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন।

মন্তব্য করুন