পরের দুয়ারে দাসী বটে আজি, তবু সে মোদেরই মা,—
ভুলিবারে চাই সতত সে কথা ; ভুলিবারে পারি না।
কাঙালের ঘরে যাহা কিছু জোটে, সে যে ধূলিমাখা খুদ,
উপবাস ক্ষীণ শীর্ণ বক্ষে শুকায়ে গিয়াছে দুধ,—
তবু তাই খেয়ে বাঁচে এই প্রাণ, তাই দিয়ে এই দেহ,
ধূলামাটি মাখা তাহারই অঙ্কে বাঁধি দুদিনের গেহ,
হাঁটিতে শিখেছি যার হাঁটু ধরে, যে বুকে মেলিয়া পা,
হক ভিখারিনী—তবু সে জননী, কেমনে ভুলিব তা?
মাতা বিনতার দুখের দুলাল, মানুষ নয় সে, পাখি!
মায়ের দুঃখ-ভরা দাসীত্ব ঘুচাইয়াছিল না কি?
যতই এ-হিয়া উঠে গুমরিয়া বিপদ-বেদনা-বিষে,
মানুষের ঘরে জন্ম লভিয়া সে-কথা ভুলিব কিসে?
কোথা প্রাণপণ প্রবল নিষ্ঠা, চিত্ত অকুতোভয়,
কই সে বেদনা, শক্তিসাধনা, পণ মৃত্যুঞ্জয়?
প্রচণ্ড তেজ চাই সে গরুড়—আমাদেরই মাঝে চাই,
অমৃতের লাগি সেই প্রাণপণ— ভুলিবনা ভুলি নাই।
এস তপস্বী, উগ্রশক্তি, এস হে কর্মবীর,
কর দৃঢ় পণ মায়ের চক্ষে মুছাতে অশ্রুনীর;
পায়ে-পায়ে যত বিভেদের বাধা ভুলায়ে পরস্পরে
ভায়ে ভায়ে আজি মিলাইতে হবে জননীর ভাঙা ঘরে;
এস হে হিন্দু, এস খ্রীষ্টীয়, পারসী, মুসলমান
যে মায়ের বুকে জন্ম তোমার, রাখ আজি তার মান।
যে জননী আজ ভিখারিনী হয়ে ভুলেছে আপন বাণী,
অর্জিয়া তারি ধর্মরাজ্য কর তাঁরে রাজরাণী।