ভারতের ভাগ্য-বিপ্লব

107
0

পূর্বকার দেশাচার কিছুমাত্র নাহি আর
অনাচারে অবিরত রত।
কোথা পূর্ব রীতি নীতি, অধর্মের প্রতি প্রীতি,
শ্রুতি হয় শ্রুতিপথহত।।
দেশের দারুণ দুখ দেখিয়া বিদরে বুক,
চিন্তায় চঞ্চল হয় মন।
লিখিতে লেখনী কাঁদে ম্লানমুখ মসীছাঁদে
শোক-অশ্রু করে বরিষণ।।
কি ছিল কি হ’ল, আহা, আর কি হইবে তাহা,
ভারতের ভবভরা যশ।
ঘুচিবে সকল রিষ্টি হবে সদা সুখ-বৃষ্টি,
সর্বাধারে সঞ্চারিবে রস।।
সুরব সৌরভ হয়ে দশদিকে যশ লয়ে,
প্রকাশিবে শুভ সমাচার।
স্বাধীনতা মাতৃস্নেহে ভারতের জরা-দেহে
করিবেন শোভার সঞ্চার।।
দুর হবে সব ক্লান্তি পলাবে প্রবলা ভ্রান্তি,
শান্তিজল হবে বরিষণ।
পুণ্যভূমি পুনর্বার পূর্বসুখ সহকার,
প্রাপ্ত হবে জীবন যৌবন।।
প্রবীণা নবীনা হয়ে সন্তানসমূহ লয়ে
কোলে করি করিবে পালন।
সুধাসম স্তন্যপানে জননীর মুখপানে
একদৃষ্টে করিবে ঈক্ষণ।।
এরূপ স্বপনমত, কত হয় মনোগত,
মনোমত ভাবের সঞ্চার।
ফলে তাহা কবে হবে প্রসূতির হাহারবে,
সূত সবে করে হাহাকার।।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
লিখেছেন

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) একজন বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সম্পাদক। তিনি বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর হাত ধরেই বাংলা কবিতা মধ্যযুগীয় সীমানা অতিক্রম করে আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছিল।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮১২ সালের ২৫ ফাল্গুন (৬ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার কাঁচড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরিনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন একজন কবিরাজ। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি। তবে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

১৮৩১ সালের ২৮ জানুয়ারি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত "সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পত্রিকাটি বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। "সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারের বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান কবি ছিলেন। তিনি তাঁর কবিতায় মধ্যযুগীয় রীতিনীতি ও কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিকতার পথে হেঁটেছিলেন। তাঁর কবিতার ভাষা ছিল সরল ও সহজবোধ্য। তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু ছিল বাস্তব ও পরিবর্তনশীল।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:

* "বিদ্যাসুন্দর" (১৮৩৬)
* "কবিতাবিতান" (১৮৫৭)
* "আলাপসাহিত্য" (১৮৫৮)

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি তাঁর কবিতায় ও লেখালেখিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮৫৯ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার পথকে মসৃণ করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন