দুঃখের আরেক নাম

118
0

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।
আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,
পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।

নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন,
মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি
নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।
তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,
আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ
পৃথিবীকে উপহাস করে।

একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা
আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে
পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে।
এখন তুমিই বলো নারী
তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো?

আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,
ব্যাকুল শুশ্রূষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো
নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,
এতোদিন নারী ও রমণীহীন ছিলাম বলেই ছিলো
দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।

হেলাল হাফিজ
লিখেছেন

হেলাল হাফিজ

হেলাল হাফিজ একজন বাংলাদেশী কবি। তিনি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনা জেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

হেলাল হাফিজ একজন স্বল্পপ্রজ কবি। তার মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে:

* যে জলে আগুন জ্বলে (১৯৮৬)
* কবিতা একাত্তর (২০১২)

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "যে জলে আগুন জ্বলে" প্রকাশের পরপরই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই কাব্যগ্রন্থে তার প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম ও মানবতাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

হেলাল হাফিজের কবিতায় এক ধরনের রহস্যময়তা ও আধ্যাত্মিকতা লক্ষ্য করা যায়। তার কবিতায় প্রায়ই প্রেম, প্রকৃতি, মৃত্যু, বিরহ, শোক ও বেদনার মতো বিষয়বস্তু উঠে আসে। তার কবিতায় ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত সুষম ও সুন্দর।

হেলাল হাফিজ তার কাব্যপ্রতিভার জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫)
* যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬)
* আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭)
* নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা
* বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৩)

হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের একজন অন্যতম জনপ্রিয় কবি। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে।

হেলাল হাফিজের কবিতার কিছু উল্লেখযোগ্য পঙক্তি:

* "এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।"
* "আমি জানি না, তুমি কি জানো,
আমাদের এই জীবনের শেষে,
আমরা কেমন করবো?"
* "আমার হৃদয়ের মধ্যে একটা ঝর্ণা আছে,
সে ঝর্ণা সবসময় বয়ে চলেছে।"
* "আমি চাই না, তোমার জীবনে আসুক কোন শোক,
আমি চাই না, তোমার জীবনে আসুক কোন বেদনা।"

হেলাল হাফিজের কবিতা প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়ে চলেছে। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন