প্রতিবন্ধকতা

73
0

আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণে ভেসে যাবে সমগ্র পৃথিবী-
এই ভেবে বিরহী যক্ষের মতো যখন আকাশের দিকে
আকুল নয়নে তাকিয়ে রয়েছি, তখন আমাকে বিস্মিত
করে সজল-সঘন কালো মেঘ কখন যে অসভ্য ছেলের
মতো চোখ ঠেরে মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে- আমি তা টেরও পাইনি।
তার মানে এখন আর মেঘলা-ধূসর আকাশের কোনো
অস্তিত্ব নেই- তার বদলে প্রকৃতিকে গৃহবন্দি করে
সে এখন খোশমেজাজে যত্রতত্র ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অথচ কথা ছিলো, বাদল-বরিষনে তুমি এসে বসে থাকবে
কদমতলায়, আর আমি একটি হৃদয়ের ব্যাকুল বাঁশির সুর
শুনতে পাই বা না পাই, ঝড় ও বৃষ্টির জল উপেক্ষা করে
আমার পদ্ম-কোমল পা দুটো চেপে-চেপে নিজের রক্তের
ভেতর দিয়ে প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে ছুটে আসবো তোমার কাছে।
কিন্তু আষাঢ়ের প্রকৃতি হঠাৎ এমন করে বেয়াড়া হয়ে উঠবে,
কে তা জানতো? বর্ষাও যে কখনো কখনো এমন বেরসিক আচরণ
করতে পারে, জীবনে এই প্রথম আমি তা প্রত্যক্ষ করলাম।
অতএব কী আর করা? আবার নতুন দিনের প্রতীক্ষা ছাড়া
তোমার কিংবা আমার আর তো কিছুই করার নেই।
তাই এসো, এই অলস ও উদাস অবসরে উভয়ে উভয়কে
বহফোনে এমন কিছু বার্তা পাঠাই, যাতে প্রবল বর্ষণের
মধ্যে যে ভয়ংকর বজ্রপাত হয়, আর তাতে কেঁপে ওঠে
সহজ হৃদয়, তেমনি করে শিহরনের ছোঁয়া লেগে
দু’জনেই কেঁপে উঠি, আর তুমি যেন আমাকে কিছুতেই
ভুল বুঝে বাঁশির সুর থামিয়ে দিতে না পারো- অন্তত
যেন বুঝতে পারো, সত্যিই আমি পায়ে কাঁটা বিঁধিয়ে,
আমার কোমল দুটি পা টিপে টিপে, দুর্গম পিচ্ছিল পথ
পেরিয়ে তোমার দিকেই ছুটে আসতে চেয়েছিলাম,
তা যেন সত্যিই আমি তোমার কাছে প্রমাণ করতে পারি।

কিন্তু তুমিই বলো, প্রকৃতি যদি আমাদের সহায় না হয়, তা হলে
ইচ্ছে থাকলেও আয়ান-ঘরণী হয়ে আমি কেমন করে
প্রকাশ্য দিবালোকে তোমার দিকে আকুল হৃদয়ে ছুটে আসতে পারি?
তুমি যদি কৃষ্ণ না হয়ে আমার হাতে তুলে দিতে তোমার
মর্মহরণকারী বাঁশি, তা হলে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারতে,
অবরুদ্ধ সংসারের প্রজাপতি-জাল ছিন্ন করে তোমার কাছে ছুটে
যেতে গিয়ে আমাকে কতোটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে !

তাই বলছি, প্রয়োজনে তোমার চোখের জলে আমাকে ভাসিয়ে দাও,
তবু গোমড়া আকাশের মতো অমন মুখ ভার করে বসে থেকো না।
তুমি যদি আমার ওপর অমন অভিমান করে বসে থাকো,
তা হলে আমি বলবো, ‘এ জন্মেই কৃষ্ণ না হয়ে তুমি অন্তত একবার
আয়ান-ঘরণী হয়ে দেখো, কাজটা সত্যি সত্যিই অতটা সহজ নয়’ !

অসীম সাহা
লিখেছেন

অসীম সাহা

অসীম সাহা একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রবন্ধকার, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, এবং গীতিকার। তিনি ১৯৪৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর।

অসীম সাহা ১৯৬৪ সালে নেত্রকোণা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল কলেজে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

অসীম সাহার লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে 'চাঁদ ও তারা' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পূর্ব পৃথিবীর অস্থির জ্যোস্নায়' প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* ভালোবাসার কবিতা (১৯৭২)
* কালো পালকের নিচে (১৯৭৫)
* পুনরুদ্ধার (১৯৮৩)
* আগন্তুক (১৯৮৭)
* অনন্যা (১৯৯৩)
* গদ্যপদ্য (১৯৯৭)
* চিরদিন বাঙালি (২০০১)
* প্রেম ও বিরহ (২০০৫)

অসীম সাহা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক ছিলেন। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন।

অসীম সাহার সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৯ সালে একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

অসীম সাহার কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজ, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।

অসীম সাহার সাহিত্যকর্মের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হল:

* তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর।
* তার কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজ, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
* তার কবিতাগুলির মধ্যে নতুনত্ব ও সৃজনশীলতার ছোঁয়া রয়েছে।

অসীম সাহা বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন