খড়ের গম্বুজ

188
0

কে জানে ফিরলো কেননা, তাকে দেখে কিষাণেরা অবাক সবাই
তাড়াতাড়ি নিড়ানির স্তুপাকার জঞ্জাল সরিয়ে
শস্যের শিল্পীরা এসে আলের ওপরে কড়া তামাক সাজালে।
একগাদা বিচালি বিছিয়ে দিতে দিতে
কে যেনো ডাকলো তাকে ; সস্নেহে বললো, বসে যাও,
লজ্জার কি আছে বাপু, তুমি তো গাঁয়েরই ছেলে বটে,
আমাদেরই লোক তুমি । তোমার বাপের
মারফতির টান শুনে বাতাস বেহুঁশ হয়ে যেতো ।
পুরনো সে কথা উঠলে এখনও দহলিজে
সমস্ত গাঁয়ের লোক নরম নীরব হয়ে শোনে ।

সোনালি খড়ের স্তুপে বসতে গিয়ে– প্রত্যাগত পুরুষ সে-জন
কী মুস্কিল দেখলো যে নগরের নিভাঁজ পোশাক
খামচে ধরেছে হাঁটু । উরতের পেশী থেকে সোজা
অতদূর কোমর অবধি
সম্পূর্ণ যুবক যেনো বন্দী হয়ে আছে এক নির্মম সেলাইয়ে ।
যা কিনা এখন তাকে স্বজনের সাহচর্য, আর
দেশের মাটির বুকে, অনায়াসে
বসতেই দেবে না।

তোমাকে বসতে হবে এখানেই,
এই ঠাণ্ডা ধানের বাতাসে ।
আদরে এগিয়ে দেওয়া হুঁকোটাতে সুখটান মেরে
তাদের জানাতে হবে কুহলি পাখির পিছু পিছু
কতদূর গিয়েছিলে পার হয়ে পানের বরোজ !

এখন কোথায় পাখি ? একাকী তুমিই সারাদিন
বিহঙ্গ বিহঙ্গ বলে অবিকল পাখির মতোন
চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো ।
অথচ পাওনি কিছু, না ছায়া না পল্লবের ঘ্রাণ
কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে
পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নীচে
নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর শকুন।

আল মাহমুদ
লিখেছেন

আল মাহমুদ

আল মাহমুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি একাধারে ছিলেন একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মসজিদবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মীর আবদুল হাই এবং মাতার নাম মরিয়ম খাতুন।

তিনি ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "লোক লোকান্তর" প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে "কালের কলস" (১৯৬৬), "সোনালী কাবিন" (১৯৭৩), "মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো" (১৯৭৮), "নিরালা ঘাটের ঐ বিদায়" (১৯৮৪), "কবর থেকে উঠে আসা" (১৯৯০), "আবার শরৎ এলো" (১৯৯৭), "সোনালি কাবিনের উপকথা" (২০০২)।

আল মাহমুদ তার কাব্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, দুঃখ, ক্ষোভ, আশা, স্বপ্ন ইত্যাদি নানামুখী অনুভূতিকে প্রকাশ করেছেন।

তিনি একজন প্রগতিশীল কবি। তার কবিতায় তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক অনাচার, অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর উচ্চারণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আল মাহমুদ তার কবিতা ও সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে:

* একুশে পদক (১৯৮৬)
* বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮)
* মরহুম মওলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কার (১৯৭৪)
* হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২)
* নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৮৮)
* স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৩)

আল মাহমুদ ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত। তার কবিতা ও সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অমূল্য অবদান রেখেছে।

মন্তব্য করুন