সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

নিশিডাক

তার আহবান ছিলো নিশিডাকের শিসতোলা তীব্র বাঁশীর মত।

প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন দিয়ে তা বাজত
নদীগুলো হিসহিস শব্দে অতিকায় সাপের মত ফণা তুলে দাঁড়াতো অরণ্যের পাখিরা ডাকাডাকি করে পথ ভুলে উড়ে যেত সমুদ্রের দিকে।
সে যখন বলল, ‘ভাইসব।’
অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল
সে যখন ডাকলো, ‘ভাইয়েরা আমার।’
ভেঙে যাওয়া পাখির ঝাঁক ভীড় করে নেমে এল পৃথিবীর ডাঙায়
কবিরা কলম ও বন্দুকের পার্থক্য ভুলে হাঁটতে লাগলো খোলা ময়দানে।

‘এই আমি,
নগণ্য এক মানুষ
দেখি, আমার হাতের তালু ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে এক আগুনের জিহ্বা।

বলো, তোমার জন্যই কি আমরা হাতে নিইনি আগুন?
নদীগুলোকে ফণা ধরতে শেখায়নি কি তোমার জন্য-
শুধু তোমারই জন্য গাছে গাছে ফুলের বদলে ফুটিয়েছিলাম ফুলকি,
আম গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফলেছিল গ্রেনেড ফল।
আর সবুজের ভেতর থেকে ফুৎকার দিয়ে
বেরিয়ে এল গন্ধকের ধোঁয়া।
আহ্
আমি এখন আর চোখ মেলতে পারছি না।

আল মাহমুদ
WRITTEN BY

আল মাহমুদ

আল মাহমুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি একাধারে ছিলেন একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মসজিদবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মীর আবদুল হাই এবং মাতার নাম মরিয়ম খাতুন।

তিনি ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "লোক লোকান্তর" প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে "কালের কলস" (১৯৬৬), "সোনালী কাবিন" (১৯৭৩), "মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো" (১৯৭৮), "নিরালা ঘাটের ঐ বিদায়" (১৯৮৪), "কবর থেকে উঠে আসা" (১৯৯০), "আবার শরৎ এলো" (১৯৯৭), "সোনালি কাবিনের উপকথা" (২০০২)।

আল মাহমুদ তার কাব্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, দুঃখ, ক্ষোভ, আশা, স্বপ্ন ইত্যাদি নানামুখী অনুভূতিকে প্রকাশ করেছেন।

তিনি একজন প্রগতিশীল কবি। তার কবিতায় তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক অনাচার, অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর উচ্চারণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আল মাহমুদ তার কবিতা ও সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে:

* একুশে পদক (১৯৮৬)
* বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮)
* মরহুম মওলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কার (১৯৭৪)
* হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২)
* নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৮৮)
* স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৩)

আল মাহমুদ ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত। তার কবিতা ও সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অমূল্য অবদান রেখেছে।

মন্তব্য করুন

সম্প্রতি মন্তব্যসমূহ

প্রতি মাসে প্রকাশিত

বিষয় সমূহ