নারী ও ধরিত্রী

93
0

অনেক রৌদ্রের দাহ, অনেক ঝঞ্জার প্রহরণ,
অনেক প্লাবন মারী, বহু হৃদি রক্তের ক্ষরণ
সহিয়াও জননী বসুধা
ঋতুপাত্র ভরি ভরি এনে দেয় নিত্য নব সুধা

এ ধরিত্রী মাতা ও দুহিতা
সর্বংসহা, শান্ত, অনিন্দিতা।
তাই ত দুহিতা তার ভঙ্গুর মাটির পত্র ভরি
যোগায় ক্ষুধার অন্ন তৃষ্ণার পানীয় ওষ্ঠে ধরি।

নারী সে বিচিত্র রূপে তার
গৃহে ও বাহিরে করে কর্মক্ষেত্র প্রসারি আবার
জননী স্তন্যদানে, ভগিনী কৈশোর খেলা সাথী
পুরুষের। সন্ধ্যায় সে বধূরূপে জ্বালে গৃহে বাতি।
কঠোর সংগ্রামময় জীবনের অন্ধকার রাতে
আশার বর্তিকা নিয়ে হাতে
নরেরে প্রেরণাদানে নারী
সংসার সাম্রাজ্য হয় তারি,
সম্রাজ্ঞী সে আপন গৌরবে
রজনীগন্ধার মতো পেলব সৌরভে
নরেরে আপন করি লয়
মমতার মধুভরা নারীর হৃদয়
চিরদিন, সর্বযুগে নারী মহীয়সী
প্রাণের আলোকে জ্বালি এ বিশ্বেরে তুলিছে উদ্ভাসি।

সুফিয়া কামাল
লিখেছেন

সুফিয়া কামাল

সুফিয়া কামাল একজন প্রথিতযশা বাঙালি কবি, লেখিকা, নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে খ্যাতিমান।

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আব্দুল বারী ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা সাবেরা বানু ছিলেন একজন গৃহিণী।

সুফিয়া কামাল ১৯২২ সালে সৈয়দ হোসেনকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা ছিল।

সুফিয়া কামালের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯২৬ সালে। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ছিল "আমার ছেলেবেলা"। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:

* ঝিঙেফুলের মালা
* মায়ের কাছে
* মেয়েলি ছড়া
* কবিতাসমগ্র

সুফিয়া কামালের কবিতাগুলিতে তিনি নারীর অধিকার, নারীমুক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। তার কবিতাগুলিতে নারীর সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাসের কথা ফুটে উঠেছে।

সুফিয়া কামাল ছিলেন একজন প্রগতিশীল ও আধুনিক চিন্তাবিদ। তিনি নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তিনি নারীদের আত্মবিশ্বাস ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার জন্য কাজ করেছেন।

সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন