অচল প্রেমের পদ্য- ০১-১৩

83
0

০১- “অচল প্রেমের পদ্য”

আছি।
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, – আছি,
মনে ও মগজে
গুন্‌ গুন্‌ করে
প্রণয়ের মৌমাছি।

০২- “অচল প্রেমের পদ্য”

কোনদিন, আচমকা একদিন
ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,-
‘চলো যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই’,
যাবে?

০৩- “অচল প্রেমের পদ্য”

তোমার জন্য সকাল, দুপুর
তোমার জন্য সন্ধ্যা
তোমার জন্য সকল গোলাপ
এবং রজনীগন্ধা।

০৪- “অচল প্রেমের পদ্য”

ভালোবেসেই নাম দিয়েছি ‘তনা’
মন না দিলে
ছোবল দিও তুলে বিষের ফণা।

০৫- “অচল প্রেমের পদ্য”

তোমার হাতে দিয়েছিলাম অথৈ সম্ভাবনা
তুমি কি আর অসাধারণ? তোমার যে যন্ত্রনা
খুব মামুলী, বেশ করেছো চতুর সুদর্শনা
আমার সাথে চুকিয়ে ফেলে চিকন বিড়ম্বনা।

০৬- “অচল প্রেমের পদ্য”

যদি যেতে চাও, যাও
আমি পথ হবো চরণের তলে
না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব
ফেরাবো না, পোড়াবোই হিমেল অনলে।

০৭- “অচল প্রেমের পদ্য”

আমাকে ঠোকর মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;
ইস্‌! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দিই।

০৮- “অচল প্রেমের পদ্য”

তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?
চিনি, খুব জানি
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে নাই বা দিলাম
ভালোবাসার পূর্ণ অধিকার

০৯- “অচল প্রেমের পদ্য”

আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে
মানুষের কাছে এওতো আমার এক ধরনের ঋণ।
এমনই কপাল আমার
অপরিশোধ্য এই ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

১০- “অচল প্রেমের পদ্য”

হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি
নয় তো গিয়েছি হেরে
থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা
কে কাকে গেলাম ছেড়ে।

১১- “অচল প্রেমের পদ্য”

যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে,
কবি কিংবা যে কোনো আধুনিক মানুষের কাছে
সেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়।

হয় তো এখন আমি তেমনি এক নিয়ন্ত্রনহীন
নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি,
নইলে এতদিন তোমাকে একটি চিঠিও লিখতে
না পারার কষ্ট কি আমারই কম!

মনে হয় মরণের পাখা গজিয়েছে।

১২- “অচল প্রেমের পদ্য”

নখের নিচে রেখেছিলাম
তোমার জন্য প্রেম,
কাটতে কাটতে সব খোয়ালাম
বললে না তো, – ‘শ্যাম,
এই তো আমি তোমার ভূমি
ভালোবাসার খালা,
আঙুল ধরো লাঙ্গল চষো
পরাও প্রণয় মালা’।

১৩- “অচল প্রেমের পদ্য”
তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছ !

রফিক আজাদ
লিখেছেন

রফিক আজাদ

**রফিক আজাদ** (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ - ১২ মার্চ ২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী আধুনিক কবি। তিনি ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে চিহ্নিত। তিনি ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সাহিত্যপত্রের সম্পাদনা করেছেন এবং জীবিকাসূত্রে সরকারি চাকুরিও করেছেন।

রফিক আজাদের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার গুণী গ্রামে। তার পিতা সালিম উদ্দিন খান এবং মা রাবেয়া খান। তিনি ১৯৫৯ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতি হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।


রফিক আজাদ ১৯৬০-এর দশকে সাহিত্যচর্চায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অসম্ভবের পায়ে" ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি "সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে", "হাতুড়ির নিচেয় জীবন", "অনেক বেশি দূরে নেই", "অপার অরণ্য", "ভয়ঙ্কর নির্জনতা", "প্রকৃতির কবিতা", "নির্বাচিত কবিতা", "কবিতাসমগ্র"সহ আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা, সমাজ, রাজনীতি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।


রফিক আজাদের কবিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা, গভীর উপলব্ধি, ও মানবিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তার কবিতা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সহজেই প্রবেশ করে। তার কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা, সমাজ, রাজনীতি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।


রফিক আজাদ তার কাব্য প্রতিভার জন্য অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।


রফিক আজাদ একজন সফল কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ।


**রফিক আজাদের কবিতার কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়:**


* প্রেম: রফিক আজাদের কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রেম। তার কবিতায় প্রেমের বিভিন্ন রূপের প্রকাশ ঘটেছে। তিনি প্রকৃতি প্রেম, মানব প্রেম, ও ঈশ্বর প্রেমের কথা বলেছেন।
* প্রকৃতি: রফিক আজাদ প্রকৃতির একজন নিবেদিত প্রেমিক ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের বর্ণনা সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে।
* মানবতা: রফিক আজাদ একজন মানবতাবাদী কবি ছিলেন। তার কবিতায় তিনি মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা, ও সমতার কথা বলেছেন।
* সমাজ: রফিক আজাদ সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিবাদ করেছেন তার কবিতায়। তিনি দারিদ্র্য, অশিক্ষা, ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
* রাজনীতি: রফিক আজাদ একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার কবিতায় তিনি রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।


**রফিক আজাদের কবিতার কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা:**


* "অসম্ভবের পায়ে"
* "সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে"
* "হাতুড়ির নিচেয় জীবন"
* "অনেক বেশি দূরে নেই"
* "অপার অরণ্য"
* "ভয়ঙ্কর নির্জনতা"
* "প্রকৃতির কবিতা"
* "নির্বাচিত কবিতা"


রফিক আজাদের কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি স্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ।

মন্তব্য করুন