প্রাগৈতিহাসিক

38
0

অতীত যেখানে শুরু সেই পথে হেঁটে যেতে যেতে
নৃমুণ্ডের মাঠ আর রুক্ষ পাহাড়ের গায়ে হাত রেখে দেখি
সেদিনের মানুষের দহনের ইতিহাস লেখা আছে নির্বাক পাথরে
বৃক্ষের কঙ্কালে আর ফসিলের দোকানে দোকানে
সেই পথে যেতে যেতে আস্ত এক চাঁদ ঢুকে আমার খুলিতে
কল্পনার দরোজায় তোমাকে হাজির করে দিলো
এসব আমার ভালো লাগে না মোটেই – তবু পাশাপাশি চলি
যেতে যেতে মনে হয় তুমিও দোকানে ঝুলে ছিলে
বাঁকানো সলাকা বিদ্ধ মাংসের ফসিল হয়ে আমার পাশেই
মাংস শব্দটায় এক জৈবিক আস্বাদ আছে বলেই দৈবাৎ
আদিম ইচ্ছের রাতে জেগে উঠি সেকালের তুমি আর আমি

দু’জনে যুদ্ধের সাজে – তখনো প্রস্তর যুগ আসেনি এ পৃথিবীতে তাই-
যৌনগন্ধী অস্ত্র দিয়ে পরস্পর হয়ে যাই শিকার-শিকারী
তারপর ক্লান্ত দুই প্রাগৈতিহাসিক নর-নারী নৈশভোজ সারি বসে
শুক্রের তরল স্যুপ জরায়ুর ঝোল আর কোষবদ্ধ ডিমে
ডিমের ভিতরে আমি কুসুমের হাসি খুঁজি – যে হাসি ফোটেনি

যৌনতার দাহ দিয়ে পোড়ানো এ পথ আর কত দূর গেছে
সে হিসেব মেলাবার প্রয়োজনে তুমি আর আমি খুঁড়ে খুঁড়ে
পৃথিবীর ছবি আঁকি সূর্যের জন্মের কাল থেকে শুরু করে
অথচ কেবল সূর্য আঁকার পরেই দেখি বিস্ময়ে দু’জন
পৃথিবীর আয়ু মাপা থেকে ঢের বড় এক মানবিক কাজ
মস্তিষ্কের কোষে কোষে পাপবোধ জন্মাবার পোশাক পরানো
ক্ষুধা আয় যৌনতার মত যেটা প্রাকৃতিক নয়

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
লিখেছেন

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একজন বাংলাদেশী গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা এবং লেখক। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে গীতিকার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রের জন্য গীত রচনা শুরু করেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* "সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে" (গান: নীল আকাশের নীচে, চলচ্চিত্র: নীল আকাশের নীচে, ১৯৭৩)
* "ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়" (গান: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, চলচ্চিত্র: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, ১৯৭৭)
* "দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক" (গান: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, চলচ্চিত্র: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, ১৯৭৯)
* "কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল" (গান: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চলচ্চিত্র: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, ১৯৮২)
* "যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে" (গান: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, চলচ্চিত্র: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, ১৯৮৩)
* "আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়" (গান: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, চলচ্চিত্র: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, ১৯৮৫)
* "আমার বাউল মনের একতারাটা" (গান: আমার বাউল মনের একতারাটা, চলচ্চিত্র: আমার বাউল মনের একতারাটা, ১৯৮৬)
* "চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ" (গান: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, ১৯৯১)

রফিকউজ্জামান তার গানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি পদক, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গান বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গান বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলা গানের একজন কিংবদন্তি গীতিকার।

মন্তব্য করুন