পৃথিবী আজ

78
0

প্রকৃতি থেকে ফসল নীলকন্ঠ এলো;
সময়পাপচক্র থেকে বাহির হলো ব্যথিত নিঃসহায়।
সবের পথে শতাব্দীর এই রাত্রি ব্যাপকতা
প্রশান্তি নয়- ক্রমেই বেশি স্পষ্টতা জাগায়।

সময় এখন চারদিকেতে ঘনান্ধকার দেখে
বলছে: নগর নরক ব্যধি সন্ধি ফলাফল
জীবনের এই ত্যক্ত সন্ততিদের প্রলাপ আলাপে পরিণত
হ’লো কি প্রায়? -নক্ষত্র নির্মল?

হয়তো হলো:- অন্তত আজ রাত্রি একা অল্প সময়ের
ভিতরে শুভ অনুধ্যায়ী সময়দেীর মতো
প্রাণের প্রয়াস দ্যাখাতে গিয়ে চলতে ছেদে ব্যর্থতার
হয়নি নিহত?

নদী পাখি প্রহরী জ্ঞান-বিজ্ঞানীরা সব
প্রেমিক? তবু সারাটা রাত অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি
শব কুড়িয়ে ফিরছে অন্ধকারে,
চন্দ্রে সূর্যে রক্ত তরবারী?

মানব কেমন স্বভাবত
এই কথা কি ঠিক
দেশ সময়ের মানুষমনের সহজ প্রকাশে
করুণা স্বাভাবিক?

আমার চোখে ভেসে ওঠে করুণা এক নারী:
হাত দুটো তার ঠান্ডা শাদা-তবুও উষ্ণতা
প্রিয়ের মতন, কাম তবু আজ প্রিয়তর নিরিখ পৃথিবীর:
স্থুল প্রগলভ বিষয় ব্যবহার ও কথা

সবের চেয়ে সুখের বিষয় ভেবে
রন্ধ্রে ঋণে উন্মাদনায় পুরুষার্থ লভি;
জীবনে আরেক গভীরতরভাবে
ঢুকেও তো আজ তা অ-প্রেমই স্বভাব।

পিরামিড ও অ্যাটম আগুন অধির প্রাণনার
উৎসারিত রাষ্ট্র সমাজ শক্তি রচনায়
প্ল্যান কমিশন কনফারেন্সের বৃহৎ প্রাসাদে
হঠাৎ মহাসরীসৃপকে দ্যাখা যায়।

জীবনানন্দ দাশ
লিখেছেন

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:

* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:

* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।

মন্তব্য করুন